শুভময় পাত্র, বীরভূম:- শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কেন্দুলীর কবি জয়দেবের নামে জয়দেব মেলা শুরু হলো আজ থেকে। নানান টালবাহানের মধ্য দিয়ে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার উপস্থিতিতে প্রদীপ প্রজননের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় এই মেলার। মেলা চলবে আগামী তিনদিন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেলার উদ্বোধক রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কুটিরশিল্প দপ্তরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। বীরভূমের জেলা শাসক বিধান রায়, ইলামবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রবি মূর্মু, জয়দেব মেলা কমিটির সম্পাদক তথা বোলপুর মহকুমা শাসক অয়ন নাথ সহ বিশিষ্টরা।
প্রতি বছরের মত পৌষ বা মকর সংক্রান্তির দিন ধর্মীয় পূর্নার্থীদের পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু হয়। এই মেলা মূলত বীরভূমের সংস্কৃত পণ্ডিত জয়দেবের স্মৃতি তর্পণ উদ্দেশ্যে উদযাপিত হয়।
বীরভূম-বর্ধমান জেলার সীমান্ত বরাবর বয়ে চলা অজয় নদের ধারে কেন্দুলি গ্রাম। এখানেই ছিল রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেবের নিবাস। রাধাগোবিন্দের মন্দির সহ কেন্দুলিতে জয়দেবের স্মৃতিধন্য বহু দ্রষ্টব্য থাকলেও কেন্দুলির সব চেয়ে বড় পরিচয় পৌষ সংক্রান্তির মেলা, যাকে কেন্দ্র করে কেন্দুলির কথা আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়েছে। প্রাচীনত্ব ও জনপ্রিয়তার নিরিখে এ মেলা আজ দেশের অন্যতম প্রধান মেলা হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রতিবছর সমাগম হয় লক্ষাধিক মানুষের। ঐতিহাসিকদের মতে গঙ্গাবোধে অজয়ে মকরস্নান উপলক্ষেই এই মেলার সূচনা হয়েছে সুদূর অতীতে। পরে তার সঙ্গে জয়দেবীয় ঐতিহ্যধারা যুক্ত হয়ে হয়েছে জয়দেবের মেলা।
অজয় নদে মকর সংক্রান্তির দিনে পুণ্যার্থীরা স্নান করেন। এই সময় নদীতে জল কম থাকে। সেই কারণে প্রতিবছর প্রশাসন থেকে বালি তুলে জল জমানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ডুব দেওয়ার জন্য পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা ঘাট বানানো হয় প্রতিবছর।
জয়দেব মেলা মানেই বাউল গানের আসর। সেই সঙ্গে অবশ্যই কীর্তন। প্রতিবছর এই মেলায় তৈরি করা হয় কীর্তনীয়াদের জন্য কীর্তনের আখড়া এবং বাউলদের জন্য বাউলের আখড়া। এবছরেও প্রায় ৩০০ টি আখড়া তৈরি করা হয় মেলাটিতে। পাশাপাশি খাবারের ষ্টল বসেছে প্রায় ৪৫০। মেলার স্থানের পাশের রামপুর ফুটবল মাঠেও চলে মেলা।
বীরভূম জেলা পুলিশ সুত্রে খবর, এই রাজ্যে জঙ্গি ধরা পড়ায় নিরাপত্তা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বাড়ানো হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ কর্মী থাকছে মেলায় নিরাপত্তার জন্য। আগামীকাল পৌষ সংক্রান্তি। হাজার হাজার ভক্তদের ভিড় হবে অজয়ের ঘাটে পুণ্যস্নানের জন্য। নিরাপত্তার জন্য ঘাটে বসানো হয়েছে সিসিটিভি। এছাড়াও এন্টি ক্রাইম টিম থাকছে মেলায়।