নীলেশ দাস, আসানসোল :-একই পরিবারের চার জনের মৃতদেহ উদ্ধার,মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা, তদন্তে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে তাদের মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে।
পরিত্যক্ত পাথর খাদানের জল থেকে উদ্ধার হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই চারটি মৃতদেহর সনাক্ত হলো। মৃতরা একই পরিবারের। তারা সম্পর্কে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের দুই ছেলেমেয়ে। রবিবার সন্ধ্যার পরে এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল উত্তর থানার কাল্লা এলাকায়। মৃতদের নাম হলো বিজয় রাউত ( ৪৬), মিতু দেবী ( ৩৭), কৃষ্ণ রাউত ( ১০) ও লাডলি রাউত ( ৩)। বিজয় আসানসোল উত্তর থানার আরসিআইয়ের লালবাংলো এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতো। সে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের আসানসোল ডিভিশনের আসানসোলের জিটি রোডের সিটি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া অফিসে ঠিকা কর্মী হিসাবে কাজ করতেন।
সোমবার বিকেলে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্টের ভিত্তিতে চারটি মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। তারপর পুলিশ মৃতদেহগুলি বিজয় রাউতের দাদা ওমপ্রকাশ রাউতের হাতে তুলে দেয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কোন সমস্যার কারনে বিজয় রাউত কমপক্ষে ৫ দিন আগে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরিত্যক্ত পাথর খাদানের জলে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
যদিও, বিজয়ের দাদা ওমপ্রকাশ রাউত ও ভাগ্নে পিন্টু রাউত এখনই এই ঘটনা আত্মহত্যা বলে মানতে চাননি। তাদের বক্তব্য, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আমরা কিছু বলবো। তবে এতটুকু বলতে পারি, বিজয় গোটা পরিবার নিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেনা। সে খুব শান্ত প্রকৃতির ছিলো। সবার সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিলো। তাদের দাবি, এর পেছনে অন্য কিছু থাকলেও থাকতে পারে। যদিও, সোমবার বিকেল পর্যন্ত পরিবারের তরফে কোন অভিযোগ পুলিশ কাছে করা হয়নি। পুলিশ জানায়, পরিবার কোন অভিযোগ করলে, তার ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে।
যে বাড়িতে বিজয় থাকতো তার মালিক মমতাদেবী বলেন, বিজয় খুব ভালো ছিলো। তার স্ত্রীও শান্ত স্বভাবের ছিলো। গত ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বিজয় ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বেরোনোর সময় বলে, তারা নানি ( দিদিমা) বাড়ি যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি চলে আসবে। তারপর দুদিন না আসায় আমি ওর দুটি মোবাইলে ফোন করি। দেখি সুইচ অফ। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কাল রাতে পুলিশের কাছে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার কথা জানতে পারি।
বিজয়ের দাদা এদিন বলেন, কাল রাতে পুলিশের ফোন পেয়ে গোটা ঘটনার কথা শুনে অবাক হয়ে যাই। তড়িঘড়ি চলে আসি। বুঝতে পারছি না, কি করে এই ঘটনা ঘটলো। তিনি বলেন, ভাইয়ের চারকাঠা একটা জমি ছিলো। শুনেছিলাম ভাই সেই জমি দালালের মাধ্যমে ৪ লক্ষের বেশি টাকায় বিক্রি করতে চাইছিলো। তারজন্য সে দু’দফায় ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলো। তারপর আর কিছু জানিনা। তারপর এই ঘটনা। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক, ঠিক কি হয়েছে।
এদিকে আরো জানা গেছে, ৯ জানুয়ারি বিজয় তার এক দিদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলো। বলেছিলো সব ঠিক আছে। বিজয়ের জমি বিক্রি করার কথা অনেকেই জানতো।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে তাদের মৃত্যুর কারণ আরো পরিষ্কার হবে। সেই কারণে পরিবারের দাবি মতো ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার রিপোর্টের ভিত্তিতে মৃতদেহ গুলোর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।