সোমনাথ মুখার্জী,লাউদোহা:- দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের নবঘন পুর গ্রাম , গ্রামের বাউরি সম্প্রদায়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মা রক্ষা কালী। প্রায় দুশো বছরের অধিক সময় ধরে এই গ্রামে পূজিত হয়ে আসছেন মা। জনশ্রুতি আছে আজ থেকে প্রায় দু'শো বছরের আগে গ্রামের কল্প বাউৱি নামে এক গোপালক গরু চরাতে গিয়ে কিশোরী রূপে মায়ের দর্শন পান। সময় গ্রামে মণ্ডলদের প্রতাপ ছিল। তাই জঙ্গলে গরু চরানোর সময় ওই কিশোরীকে কল্প বাউরি সেখান থেকে চলে যেতে বলেন।
বাড়ি ফিরে রাত্রে স্বপ্নাদেশ পান, কিশোরী রূপে মা রক্ষাকালী তাকে দর্শন দিয়েছিলেন । শীঘ্রই গ্রামে তাঁর পূজা করার আদেশ দেন । সেই সময় গ্রামে চলছিল মহামারী দিনে দিনে লোক শূন্য হচ্ছিল গ্রাম। মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে কল্প বাউরী গ্রামের এক ছোট্ট মাটির কুটিরে মায়ের পুজো শুরু করেন। গ্রামে মায়ের পুজো শুরু হতেই রক্ষা পায় গ্রাম। গ্রাম থেকে কলেরা মহামারী রোগ মুক্ত হয় গ্রামের মানুষ। মা গ্রামের মানুষকে রক্ষা করেছিলেন বলেই এখানে মা রক্ষা কালী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন। প্রাচীন রীতিমতো প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসের প্রথম অমাবস্যায় হয় মায়ের পুজো।
আজও বাউরি সমাজের লোকেরা মায়ের ঘৃত প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু করেন মায়ের পুজো। সেই সময় বাউরী সমাজ এর আর্থিক অনটনের কারণে তারা গ্রামের ষোলআনার হাতে মায়ের পুজোর দায়িত্ব দেন। আজও মায়ের পুজো চলে আসছে প্রথামতো গ্রামের ষোল আনার উদ্যোগেই। গ্রামের বাসিন্দা সৌগত মন্ডল ও অপূর্ব বাউরিরা জানান, কথিত আছে একসময় মায়ের বারির জল আনার যে জায়গা খরার কারণে জল শূন্য হয়ে পড়েছিল। কিভাবে মায়ের পুজো হবে চিন্তায় পড়েছিলেন গ্রামের মানুষ। গ্রামের মানুষেরা মিলে পুকুর টাতে প্রায় 35 ফুট কাটার পরও জল পাওয়া যায়নি।ফের মায়ের স্বপ্নাদেশ কল্প বাউরী কে এমনটাই জনশ্রুতি আছে। স্বপ্ন দেন যে রাত্রি বারোটার পর সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় ওই কাটা জায়গায় কোদালের এক ঘা মারার জন্য।
পায়ের নির্দেশমতো গল্প রাত্রি বারোটার পর সেই জায়গায় গিয়ে কোদাল দিয়ে এক ঘা দিয়ে আসেন। জের বিষয় সকাল হতেই সেই জায়গায় দেখা যায় বিপুল পরিমাণে জলরাশি। মা রক্ষা কালীর লীলা বুঝতে মানুষের অসুবিধা হয়নি শুরু হয় মায়ের পুজো। আজও দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের নবঘন পুর গ্রামের এই রক্ষা কালী পুজো ধুমধামের সঙ্গে হয়ে আসছে। পুজো ঘিরে বসে মেলা, হয় যাত্রাপালা। গ্রামবাসীরা জানান তাদের গ্রামের এই রক্ষাকালী পূজা দুর্গোত্সবের চেয়েও বড় উৎসব। তাদের এই রক্ষা কালী পুজোয় বাড়িতে বাড়িতে সমস্ত আত্মীয়-স্বজনরা আসেন ।দুর্গাপূজায় না এলেও কালীপুজোয় গ্রামের যারা বাইরে থাকেন মায়ের পুজো এখানে উপস্থিত হন।