তনুশ্রী চৌধুরী,কাঁকসা:- 'ফেরোমন ফাঁদ' (Pheromone trap) তৈরি করে জৈব পদ্ধতিতে বেগুন চাষে সাফল্য কাঁকসায়।বাজারে গেলেই টাটকা বেগুন।কিন্তু সেই বেগুন বাড়িতে এনে রান্না করার জন্য কাটতেই তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে পোকা। আর এই বেগুনের পোকা মারতে অতিরিক্ত কীটনাশক (Pesticides) প্রয়োগ করে বেগুনের মত আনাজের গুনগত মান কমিয়ে তাকে বে - গুন করে তোলে কৃষকেরা। যার প্রভাব পরে মানুষের শরীরে।
কারণ কীটনাশক (Pesticides) প্রয়োগ করা কাঁচা সবজি খেয়ে অনেকেই পেটের নানান সমস্যায় ভোগেন।তবে এবার পশ্চিম বর্ধমান জেলায় বিষাক্ত কীটনাশক বাতিল করে ক্ষতিকারক পোকা দমনে ' ফেরোমন ফাঁদ' (Pheromone trap) স্থাপন করা হয়েছে বেগুনের জমিতে। 'ফেরোমন ফাঁদ ' পরীক্ষামূলকভাবে কাঁকসা ব্লকের বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতের ইটেডাঙ্গা এলাকায় এই জৈব প্রযুক্তি (Biotechnology) প্রয়োগ করেছেন জেলার কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
বিষমুক্ত আনাজ ও অনুকুল পরিবেশ রক্ষা সহ দূষণ রুখতে এই জৈব প্রযুক্তি (Biotechnology) কার্যকরী বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তাদের দাবি সাধারণ মানুষ এর ফলে স্বাস্থ্যকর বেগুন পাওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের চাষের খরচ কমবে এর পাশাপাশি উৎকৃষ্ট মানের বেগুন ফলিয়ে ভালো মুনাফা লাভ করবে কৃষকরা। এই জৈব প্রযুক্তিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কৃষকরাও উপকৃত বলে দাবি তাদের।
অজয় নদের পার্শবর্তী এলাকার বিস্তীর্ণ জমিতে সারাবছর নানান ধরণের কাঁচা সবজির চাষ করেন কৃষকরা। উৎকৃষ্ট মানের ফসলও ফলে সারাবছর। উৎকৃষ্ট মানের ফসল ফলাতে প্রচুর পরিমানে কীটনাশক, রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করতে হয় কৃষকদের। তবে বেগুন গাছে ও বেগুনে সব থেকে বেশি ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ হয়। ফলে গাছ ও বেগুনের ব্যাপক ক্ষতি হয় প্রতিবছর। যার কারণে প্রতিবছর লোকসান হয় চাষিদের। তাই লোকসান থেকে বাঁচতে চাষীরা বেগুন চাষে প্রচুর পরিমানে কীটনাশক ব্যাবহার করেন। যার জন্য বেগুন চাষে খরচ আরও বেড়ে যায়।
রাসায়নিক প্রয়োগ করে ওই উৎপাদিত বেগুন অস্বাস্থ্যকর বলে দাবি কৃষক সহ কৃষি বিশেষজ্ঞদের। তাই কীটনাশক ব্যাবহার বন্ধ করতে জেলার কৃষি বিশেষজ্ঞরা 'ফেরোমন ফাঁদ ' নামের জৈব প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ দমন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।প্রায় ১৫ বিঘা বেগুনের জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে এই পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।বুদবুদের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (Agricultural Science Center) সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। এই প্রকল্পে সম্পূর্ণ খরচ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র করেছে৷
কেন্দ্রীয় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র কৃষি বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ ডক্টর সুব্রত সরকার জানিয়েছেন, বেগুনে প্রচুর পরিমানে কীটনাশক ব্যাবহার করা হয়। তার ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে প্রকৃতি ও ফসল সহ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর। সেখানে কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে জৈব প্রযুক্তিতে এই ফেরোমন ফাঁদ ব্যাবহার করা হোচ্ছে। এই ফাঁদ একটি প্লাস্টিকের প্যাকের মধ্যে তৈরি করা হয়।
বেগুনের ডগা ও বেগুন ছিদ্রকারী পোকা ব্যাপক ক্ষতিকারক। ওই পোকার পুরুষ পোকার চেয়ে স্ত্রী পোকার সংখ্যা বেশি। তারা পুরুষ পোকার হরমোন বেগুনের জমিতে বসানো ফেরোমন ফাঁদে দিয়ে দেন। ওই হরমোনের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে স্ত্রী পোকা গুলি ফাঁদে এসে প্ল্যাস্টিকে আটকে যায়। এই ভাবে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে খুব সহজেই ক্ষতিকারক পোকার দমন করা সম্ভব হয়ে উঠেছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে এই ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে।
যার কারণে উপকৃত স্থানীয় চাষী বলে বিনয় পাল,জানান বেগুনের জমিতে ১০ মিটার অন্তর একটি খুঁটিতে ফেরোমন ফাঁদ বসানো হয়েছে। এই আধুনিক কীটপতঙ্গ দমন পদ্ধতি বেশ ভালোই কার্যকরী হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। কীটনাশক ব্যবহারের ব্যায় কমেছে। ভালো ফলনও হচ্ছে।