তিনি চিকিৎসক। রোগী আর পরিজনের কাছে তিনিই ভরসা। নানান সমস্যার মধ্যে রোগীকে আশার বাণী শোনাতে হয় তাকে। কিন্তু তিনিও মানুষ। একটা পর্যায়ে মানসিক বিপর্যয় ঘটতে পারে তারও। বর্ধমানের বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনির্বাণ বিশ্বাসের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে রোগীদের অসহায় অবস্থায় কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্বয়ং ডাক্তারবাবু। এই দৃশ্য যেমন আজকের পরিস্থিতির নির্মমতাকে তুলে ধরেছে। তেমনিই একজন চিকিৎসকের মানবিকতাকে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছে।বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও বক্ষরোগের বিখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ অনির্বাণ বিশ্বাস। দীর্ঘদিন তার চেম্বারে বসে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। গতবছর প্রথম করোনার সময় থেকে যেসকল চিকিৎসক ধারাবাহিকভাবে পরিষেবা দিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে একজন তিনি।
গত কয়েকদিন আগের ভিডিওতে তাকে রীতিমতো কাঁদতে দেখা যায়। রোগীদের অসহায় পরিস্থিতির কথা ভেবে। একইসঙ্গে তিনি রোগীকে সময়মত নিয়ে আসার জন্য বারবার আবেদন জানান।
ডাক্তার বিশ্বাস জানিয়েছেন, তিনি দাপটের সাথেই চিকিৎসা করেন। বিভিন্ন সময় ফেসবুকে তার পেজে তিনি নানা পরামর্শ দিয়ে এসেছেন কোভিড সংক্রমণের নানা পর্যায়ে। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি থেকে গত দুমাস তার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তিনি সহ অন্য চিকিৎসকরা বিধ্বস্ত। তাদের উচিত রোগীদের পজিটিভ এনার্জি সঞ্চার করা। কিন্তু আর তা করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, পনেরদিন রোগীকে ফেলে রেখে ডাক্তারখানায় নিয়ে আসছেন কেউ। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ত্রিশ এই ঘটনা হোয়াটসঅ্যাপে লিখে কী করণীয় জানতে চেয়ে দেখছেন পূর্বের নির্দেশমত রোগীকে ভর্তিই করা হয়নি।কারণ জানতে চাইলে জানতে পারেন বেডই পাননি তারা। আরা বেসরকারি পরিষেবা নেবার ক্ষমতাই নেই তাদের।
তিনি জানান সেদিন পরপর সতেরো জন রোগীর বিপন্নতা দেখি। আমি আর পারছিলাম না। আমারা অ্যাটেডেন্ট এসে জানায় রোগীদের নিয়েই যেতে চাইছেন না কোনো টোটোচালক। এই অবস্থায় ভেঙে পড়েছিলাম ফেসবুকে। তিনি বারবার আবার মনে করিয়ে দেন উপসর্গ দেখলেই রোগীকে নিয়ে আসুন। দেরি করবেন না। নইলে কিছু করার থাকবেনা।
আমাদের রাজ্যে রোগী আর চিকিৎসক এর সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না, গত কয়েক বছর বারেবারে এই সম্পর্কে অবিশ্বাস এসেছে। করোনা এসে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা ছাড়া আমরা অসহায়৷ অনির্বাণ বিশ্বাসের এই ভিডিও রোগী আর চিকিৎসক এর সম্পর্কের গভীরতা আর তার মানবিক আবেদনকে আবার সামনে নিয়ে এলো ।