লক্ষ লক্ষ টাকা বিজ্ঞাপণে খরচ করলেও এলাকার চাষিদের চরম ক্ষতি করছেন একটি নামী ব্রাণ্ডের চাল কোম্পানি এই অভিযোগে ও ন্যায্যমূল্যে জমির ধান বিক্রয়ের দাবীতে ওই নামী ব্রাণ্ডের চালের উৎপাদন হয় যেখান থেকে সেই রাইসমিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন পূর্ব বর্ধমানের পারাজ গ্রামের চাষিরা। তাদের অভিযোগ ওই মিলের ছাই এবং পচা জল দু হাজার বিঘে ধানের জমি ক্ষতি করে। তাই ওই মিল ন্যায্যমূল্যে জমির ধান কিনে নিক।কর্তৃপক্ষ অবশ্য সরকারি নির্দেশের দোহাই দিয়ে কোনো আশ্বাস দেন নি।
নিজেদের উৎপাদিত ধান বিক্রয়ের দাবীতে বৃহস্পতিবার মিলের গেটে বিক্ষোভ দেখালেন চাষীরা। এদিন গলসি ১ নম্বর ব্লকের পারাজ অঞ্চলের শতাধিক চাষি জড়ো হন স্থানীয় ভদ্রেশ্বর রাইস মিলে। তারপরই শতাধিক চাষি বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ঘটনার খবর পেয়ে গলসি থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন।
চাষিদের অভিযোগ, প্রতি বছরই ভদ্রেশ্বর রাইস মিল জমিতে পচা জল ঢুকে এলাকার পাঁচ সাতশো বিঘা জমির ধান নষ্ট করে দিচ্ছে। ভূগর্ভ থেকে প্রতিদিন গ্যালন গ্যালন জল তুলে এলাকার জলস্তর নিচে নামিয়ে তাদের পানীয় জলের সমস্যায় ফেলছে। মিলে ব্যবহারের পর পচা বর্জ্য জল পাইপের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী সেচ ক্যানেলে ও জমিতে ফেলে দিচ্ছে।
এরজন্য এলাকার পরিবেশের সাথে সাথে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়াও ফলনের সময় জমিতে মিলের ছাই উড়ে এসে ধানের ফলনের ব্যাঘাত ঘটেচ্ছে। এর ফলে তাদের জমিতে বেশিবেশি চাল বিহীন ধান উৎপাদিত হচ্ছে। আর তাতেই বিঘাপতি ফলন কমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
পাশাপাশি মিলের ছাই ও ধুলোগুড়ো পার্শ্ববর্তী গ্রামে উড়ে গিয়ে বায়ুদূষণ ছড়াচ্ছে। নিত্যদিন গুড়ো ধুলো উড়ছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে। পথচারী থেকে যানবাহন চালক ও স্থানীয়রা বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। কখনও কখনও ছাই ও গুড়ো উড়ে চোখ নষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
যেহেতু এই মিলের জন্য এলাকার বহু চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এই মিলকে তাদের উৎপাদিত ধান কিনতে হবে এমনই দাবীতে অনড় চাষিরা। তবে এক্ষেত্রে সরকারী সহায়ক মুল্যের ছাড়াই ধান দিতে চান চাষিরা। চাষিদের দাবী মিল কতৃপক্ষ একটি ন্যয্য দাম নির্ধারণ করে তাদের ধান কিনে নিক। এই দাবী নিয়ে আগেও তারা মিল কতৃপক্ষের কাছে কয়েকবার এসেছেন।
তাদের দাবী আলোচনা করে জানানোর কথা দিলেও বারংবার তাদের ফিরেয়ে দিচ্ছেন এমনই দাবী চাষিদের। এরপরই আজ দুপুর নাগাদ মিল পার্শ্ববর্তী পারাজ এলাকার চাষিরা একত্রিত হয়ে হাজির হন মিলের গেটে। এবং বিক্ষোভে সামিল হন শতাধিক চাষি। বিক্ষোভকারী চাষিদের দাবি শুনে ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার বেনুরাম খাঁ জানান; সরকার যেভাবে ধান কিনতে বলবেন তাই তারা করবেন।কম দামে ধান কেনা হবে কী না তা রাইসমিল অ্যাসোসিয়েশন বলবে।
চাষিরা তাদের দাবিতে অনড়। চাষি শেখ বাদশা আলম জানিয়েছেন ;বারবার তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মিলের পচা জল আর ছাই তাদের চরম ক্ষতি করছে। আর এক বিক্ষোভকারী মিন্টু শ্যামের দাবি; এত আয় এখান থেকে করলেও পরিবশের চরম ক্ষতি করছেন কতৃপক্ষ। সহায়ক মূল্য চাই না।অন্তত নায্যমুল্যে ধান কিনে নিক ওই কোম্পানি।
আর এক চাষি শেখ আলি আহমেদ বলেন; এলাকার বড় শিল্প বলে তারা অনেক কিছু মেনে নেন।তাহলে ওরাই বা বাইরে থেকে ধান কিনবেন কেনো? চাষিরা জানান; প্রশাসনের একাংশ মিলের হয়েই কথা বলে। এই বড় সমস্যার সুরাহা না হলে আরো বড় আন্দোলন হবে।
রাইসমিলের মালিক পার্থ নন্দী বলেন, ধান কেনার বিষয়টি এইভাবে হয় না। তবে রাইসমিলের ছাই ও দূষিত জল জমি নষ্ট করছে তা মানতে অস্বীকার করেন তিনি।