সংবাদাতা,পূর্ববর্ধমান:-অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খিচুড়িতে সাপের পর এবার টিকটিকি পড়ায় চাঞ্চল্য ছড়ালো পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টির জন্য অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয় রান্না করা খাবার।মাস দেড়েকে আগে জামালপুরে বাগকালাপাহাড় গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খিচুড়িতে মিলেছিল ’সাপ’।আর বুধবার জামালপুরের সেলিমাবাদ গ্রামের মীর পাড়ার ৪০৯ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাচুড়িতে পাওয়া গেল ’টিকটিকি’। যে খাচুড়ি খেয়ে ভয়ে আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে জনা ১৫ শিশু ও তিন শিশুর মা।এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সেলিমাবাদ গ্রামে ।অসুস্থ হয়ে পড়া শিশু ও শিশুর মায়েদের চিকিৎসা হয় জামালপুর গ্রামীণ হাসপাতালে । ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ব্লক প্রশাসন ।
জামালপুর ব্লকের জামালপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সেলিমাবাদের মীর পাড়া।এই গ্রামের ৪০৯ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে পুষ্টিদায়ক খাবার (খিচুড়ি) পাওয়ার জন্য ৫৬ জনের নাম নথিভুক্ত রয়েছে ।অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব সামলান কর্মী অঞ্জনা দাস দে ও সহায়িকা মমতাজ বেগম।অন্যান্য দিনের মত বুধবার সেলিমাবাদের মীর পাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খিচুড়ি রান্না করা হয়।বেলা ১০ টার মধ্যে খিচুড়ি রান্না হয়ে গেলে তা সেখানকার শিশু ও শিশুর মায়েদের কেন্দ্রে বসেই অনেকে খিচুড়ি খায়।অনেকে আবার পাত্রে খিচুড়ি নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।বাড়িতে যাঁরা খিচুড়ি নিয়ে যান তাঁদের কয়েকজন খিচুড়ি খেতে খেতে দেখেন খিচুড়িতে মিশে রয়েছে টিকটিকির দেহাবশেষ ।
সেই খিচুড়ি খেয়ে ফেলায় তারা বমি করা শুরু করেন।অসুস্থতাও অনুভব করেন। এই খবর মীর পাড়ায় ছড়িয়ে পড়তেই অনেকেই ভয়ে আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে।চিকিৎসার জন্য একের পর এক শিশু ও তিন শিশুর মা কে নিয়ে পরিবারের লোকজন জামালপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। ডাক্তারের পরামর্শে কয়েকজনকে ইনজেকশনও তার পর দীর্ঘ সময় তাঁদের হাসপাতালেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয় । এই খবর পেয়ে জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝি হাসপাতালে পৌঁছে শিশুদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন ।
এমন ঘটনা এই প্রথম জামালপুর ব্লকে ঘটলো এমনটা নয়।গত ৮ জুন জামালপুরের পাড়াতল ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাগকালাপাহাড় গ্রামের ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না হওয়া খিচুড়িতে মিলেছিল ’মরা সাপের বাচ্চা’। সেই খিচুড়ি খেয়ে ফেলায় ভয়ে আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে বেশ কিছু শিশু। যদিও সেবার বড় কোন বিপদ হয় নি। এই ঘটনার পর মাত্র দেড় মাস কাটতে না কাটতে ফের জামালপুরের মীরপাড়ার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খিচুড়িতে টিকটিকি দেহাবশেষ মেলার অভিযোগ ওঠলো।যা নি চরম অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে প্রশাসন।
এদিন জামালপুর হাসপাতালে নিজের শিশুদের চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসেন মীর পাড়ার মহিলা নাসিমা খাতুন ও রীণা খাতুন। তাঁরা বলেন,'অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে এদিন খিচুড়ি দেওয়া হয় । সেই খিচুড়ি অনেক শিশু খেয়েও নেয়।খানিক পর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন খিচুড়িতে টিকটিকি পড়েগিয়েছিল । সেটা খিচুড়ির সঙ্গে মিশে গিয়েছে' । এই কথা অন্য শিশুর পরিবারকেও জানিয়ে দেন নাসিমা খাতুন ও রীণা খাতুন।বিষয়টি জানার পর তাঁদের শিশু সন্তান সহ অন্য শিশুরাও অসুস্থতা অনুভব করা শুরু করে । অনেকে বমি করা শুরু করে।
তিন শিশুর মাও অসুস্থতা অনুভব করে । খালিমা বিবি নামে এক মহিলা বলেন ,'তাঁর নাতনি থালায় করে যে খিচুড়ি নিয়ে খাচ্ছিল তার মধ্যে টিকটিকির দেহের অংশ দেখতে পান ।তার পর আর দেরি না করে তিনি তাঁর নাতনিকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে জামালপুর হাসপাতালে ছুটে যান। খালিমা বিবি এও বলেন,টিকটিকি সহ রান্না হওয়া খিচুড়ি নাতনি খেয়েছে।কি হবে জানি না ।চরম আতঙ্কে রয়েছি'।
হাসপাতালে থাকা অন্য শিশুর ক্ষুব্ধ অভিবাবকরা বলেন ,অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খিচুড়ি রান্নার সময়ে কোন নজর রাখা হয় না। কয়েকদিন আগে মহকুমাশসক (বর্ধমান দক্ষিণ )জামালপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের হাল চাল খতিয়ে দেখে যান।তার পরেও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের হাল বদলায় নি । সেই কারনেই এমনসব ঘটনা ঘটছে। কখনও ’সাপ’ কখনও ’টিকটিকি’ সহ রান্না হওয়া খিচুড়ি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে থেকে শিশুদের খেতে দেওয়া হচ্ছে ।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী অঞ্জনা দাস দে যদিও বলেন,সেন্টারে খিচুড়ি রান্নার সময়ে টিকটিকি পড়েছিল এমনটা নাও হতে পারে ।তিনি দাবি করেন ,'শিশুরা বাড়িতে খিচুড়ি নিয়ে যায় । তার পর তাদের অভিভাবকরা এসে বলে খিচুড়িতে টিকটিকি রয়েছে ।কিন্তু রান্না করার সময়ে তাঁরা খিচুড়িতে টিকটিকি দেখতে পান নি। কি ভাবে কি হল সেটা বুজে উঠতে পারছেন না বলে অঞ্জনা দাস জানিয়েছেন’ । একই দাবি করেছেন,মীর পাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা মমতাজ বেগম ।
বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ’ মীর পাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খিচুড়িতে টিকটিকি ছিল , এমন একটা ঘটনার কথা শুনেছি ।ঘটনার তদন্ত করে দেখার দায়িত্ব সিডিপিও কে দেওয়া হয়েছে। উচ্চ কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে' ।