নীলেশ দাস,আসানসোল:- এক অসহায় হিন্দুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করল মুসলিম ধর্ম প্রাণ এক স্থানীয় বাসিন্দা। এই ঘটনার সাক্ষী থাকলো রানীগঞ্জ শিল্পাঞ্চল। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার বিদ্রোহী কলমের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা দিতে লিখে গিয়েছিলেন 'মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান/ মুসলিম তার নয়ন মনি, হিন্দু তাহার প্রাণ।' কবির সেই সম্প্রীতির বার্তার প্রতিফলন ঘটলো পশ্চিম বর্ধমানের রানীগঞ্জ শহরে। এক অসহায় হিন্দুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করল মুসলিম ধর্ম প্রাণ এক স্থানীয় বাসিন্দা।নাম মোঃ সামসুদ্দিন। বাড়ি রানীগঞ্জের গির্জা পাড়ায়। হুগলির মগরা এলাকার বাসিন্দা যোগেন্দ্র প্রসাদ দীর্ঘদিন রানীগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে কর্মরত ছিলেন।
স্বজনহারার কারণে তার থাকা, খাওয়া ,ঘুমানো সবটাই ছিল বাসস্ট্যান্ডের শ্রমিক বিশ্রামাগারে।আচমকাই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর ৫৫ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আইএনটিটিইউসির সেই শ্রমিক বিশ্রামাগারেই। স্বজনহারা সেই বৃদ্ধার মুখাগ্নিও করেন এমডি শামসুদ্দিন।তারপর হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী তার পালন ক্রিয়া এবং শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও করলেন তিনি।
যদিও আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয়দের অনেকেই। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে মাথা মুন্ডন এমনকি পিন্ডদান সকল-ই হল শামসুদ্দিনের হাত ধরেই। তার সাথে সাথে রইল দেদার ভুরি ভোজের আয়োজন। ডাল, ভাত , সবজি,মাছ, মিষ্টি সহ একাধিক পদ রইল তার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে। শামসুদ্দিনের এহেন সম্প্রীতির বার্তায় হতবাক সকলেই।
মোঃ সামসুদ্দিন বলেন,আমি একটা মুসলিম হয়ে যা কাজ করলাম তা আমি গর্ব অনুভব করছি। হিন্দু ধর্মের একটা কাজ করলাম। জন্মেছি পুরুষ হয়ে। ধর্ম সব এখানেই তৈরি হয়েছে। তাই আমি মনুষত্ব হিসেবেই করেছি হিন্দু ধর্মের রীতি মেনেই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। আমি গর্ব করছি আমি মুসলিম।
অন্যদিকে এক স্থানীয় বাসিন্দা অরুণ গরাই জানান,আজকে রানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যা ঘটনা হলো আমার জীবনে অভূতপূর্ব ঘটনা। একদিকে রাজনৈতিক দলাদলি আর ধর্ম নিয়ে যে উন্মাদনা। আজকে যে এক মুসলিম বন্ধু হিন্দু বন্ধুর তার কেউ না থাকার জন্যে যে পারলৌকি কাজটা যে সম্পন্ন করলেন এটা একটা উদাহরণ স্বরূপ একটা ঘটনা রানীগঞ্জ এর। এইটা আমার ভাষায় প্রকাশ করার মত নেই বলে জানান তিনি।