Type Here to Get Search Results !

Purba Bardhaman: সন্তান হোক পুত্র বা কন্যা-মাতা কোন ভাবেই দায়ী নন’, নিজের একমাত্র কন্যার বিয়েতে আগত অতিথিদের এই পাঠ দিলেন শিক্ষক বাবা


সংবাদাতা পূর্ব বর্ধমান:- সন্তান হোক পুত্র বা কন্যা-মাতা কোন ভাবেই দায়ী নন’, নিজের একমাত্র কন্যার  বিয়েতে আগত অতিথিদের এই পাঠ দিলেন শিক্ষক বাবা।একমাত্র কন্যার অদিতির বিয়ের আয়োজনে কোন খামতি রাখেননি বাবা।ফুল,মালা ও আলোক রোশনাইয়ে নিখুঁত ভাবে সাজানো হয়  বিয়ে বাড়ি।বৃহস্পতিবার সারাটা দিন বিয়ে বাড়ি ভরে থাকে সানাইয়ের সুর মূর্ছনায়।এতকিছুর মধ্যেও ওই বিয়ে বাড়িতে সবথেকে বেশী নজরকাড়া ছিল পাত্রীর শিক্ষক বাবা শ্যামাপ্রসাদ দাসের দেওয়া সচেতনতার পাঠ।তিনি বিয়ে বাড়িতেই লাগান কন্যা সন্তান নিয়ে  বিজ্ঞানসম্মত ব্যাক্ষা তুলেধরা বড়বড় ফ্লেক্স।  


তাতে উল্লেখ থাকে ’সন্তান হোক পুত্র বা কন্যা-মাতা কোন ভাবেই দায়ী না ’।নিজের মেয়ের বিয়েতে শুধু এই বার্তা দিয়েই খান্ত থাকেননি শ্যামাপ্রসাদ বাবু ।তিনি রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারির আকারে বিয়ে বাড়ির মূল ফটকে পোস্টার লাগিয়ে দিয়ে উপহার সামগ্রী নিয়ে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাখেন।বুধবার রাতে বিয়ে বাড়ির অন্দরে প্রবেশের পর এইসব চাক্ষুষ করে অতিথিরা কার্যত থমকে দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হন।তবে তাঁরা পাত্রীর বাবার এমন ভাবানার তারিফ না করেও পারেন নি ।শ্যামাপ্রসাদ দাসের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের  জামালপুরে।


তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন  তাঁদের পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা তেমন ছিলনা। তবুও সমস্ত প্রতিকুলতাকে জয় করে  লেখাপড়া চালিয়ে যান মেধাবী ছাত্র শ্যামাপ্রসাদ।বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করে সাফল্যের সঙ্গে তিনি স্নাতক হন ।পরে তিনি স্কুল শিক্ষকতার চাকরি পান। এরপর সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরে ।তবে শ্যামাপ্রসাদ বাবুর জীবনে বড় অঘটন ঘটে যায় কয়েক বছর আগে ।হঠাৎই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারাযান শ্যামাপ্রসাদ বাবুর স্ত্রী কাকলীদেবী।তখন তাঁর একমাত্র কন্যা অদিতি অনেক ছোট।


শ্যামাপ্রসাদ বাবু নিজেই একদিকে পিতা ও অন্যদিকে মাতার  ভূমিকা নিয়ে তাঁর কন্যার যাবতীয় দায় দায়িত্ব পালন করেন।বাবার বিজ্ঞান প্রীতিকে অনুসরণ করে অদিতিও সম্প্রতি কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বি,এস সি পাশ করে ।এরই মধ্যে অদিতির সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে মালদার মথুরাপুরের বাসিন্দা  পেশায় ইঞ্জিনিয়ার যুবক স্বর্ণাঙ্কু সাহার।মেয়ের পছন্দের পাত্রকেই নিজের জামাই করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শ্যামাপ্রসাদ বাবু ।বৃহস্পতিবার বিয়ের দিনেও মেয়ের ভাব ভালবাসার বিষয়টি তিনি একেবারে লিখিত ভাবেই সাজিয়ে গুছিয়ে জনসমক্ষে তুলে ধরেন ।


একমাত্র কন্যার বিয়ের দিনই কেন বিয়ে বাড়িতে কন্যা সন্তান জন্মানোর বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষা তুলে ধরলেন ? এর উত্তরে শ্যামাপ্রসাদ বাবু বলেন,বিজ্ঞান  ভিত্তিক কি কারণে সন্তান পুত্র বা কন্যা হয়ে জন্মায় তা বহু মানুষের কাছেই অজানা রয়ে আছে। তার কারণে এখনকার যুগেও বহু মানুষ মনে করেন কন্যা সন্তান জন্মানোর দায় শুধু মাত্র মায়ের।তাই কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য মায়েদের  নির্যাতন হজম করতে হয়। কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার অপরাধে অনেক মায়ের প্রাণ খোয়ানোর মত ঘটনায় ঘটছে। অথচ বিজ্ঞান বলছে,সন্তান পুত্র হোক বা কন্যা - তার জন্য মাতা কোন ভাবেই দায়ী নয় ’।


অন্ধ ধারনা থেকে মানুষ্য সমাজ মুক্ত হতে না পারলে কোন কন্যা সন্তানের বাবা মা তাঁদের মেয়ের বিয়ে দিয়ে দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে থাকতে পারবেন না । তাই মেয়ের বিয়েতে বিজ্ঞানের এই পাঠ সবার সমক্ষে তুলে ধরেছেন বলে শ্যামাপ্রসাদ বাবু জানান।পাশাপাশি তিনি এও বলেন , কোভিড অতিমারির জেরে দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে । 


সেই বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি তাঁর মেয়ের বিয়েতে উপহার সামগ্রী নিয়ে আসার  ব্যাপারে নিয়েধাজ্ঞা জারি করেছেন বলে জানান ।বিয়ে বাড়িতে সবার উপলব্ধির জন্য  শ্যামাপ্রসাদ বাবু বিজ্ঞানের যে পাঠ দিয়েছেন ,তাঁকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে অদিতি ও জামাই স্বর্ণাঙ্কু। তাঁরা বলেন ,এটাতো বিজ্ঞান সন্মত ভাবেই প্রমাণিত সন্তান পুত্র বা কন্যা যাই হোক- তার জন্য মাতা কোন ভায়েই দায়ী নন। জামাই স্বর্ণাঙ্কু বলেন ,শনিবার বৌভাতের দিন তিনি মালদার বাড়িতে অতিথিদের একই পাঠ দেবেন । তার পিছনে উদ্দেশ্য একটাই থাকবে  কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া মায়েদের লাঞ্ছনা গঞ্জনা থেকে মুক্তি দেওয়া। 


বৃহস্পতিবার অদিতির বিয়েতে উপস্থিত থাকা অতিথি অঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও যুথিকা দাস বলেন, কন্যার বিয়েতে কন্যা সন্তানের জন্ম নিয়ে কন্যার  বাবার এমন বিজ্ঞান ভিত্তিক পাঠদান কার্যতই নজিরবিহীন।ওই পাঠদান থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাই সচেতন হলে সমাজেই মঙ্গল হবে ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad