নিজস্ব প্রতিনিধি:- বাড়িতে বালি বোঝাই লরি উল্টে পড়ার উপক্রম হওয়ায় ফের অশান্ত হল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের মুইদিপুর গ্রাম।গত বছর গৃহস্থের বাড়িতে বালি বোঝাই লরি উল্টে গিয়ে একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনার পরেও হুঁশ ফেরেনি বালি কারবারীদের।এক বছর আগে জামালপুরের মুইদিপুর গ্রামে সেই দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়াট উপক্রম হয় একই জায়গায় শুক্রবার রাতে।
যা নিয়ে শনিবার সকাল থেকে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মুইদির গ্রামে । ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা এদিন তাঁদের গ্রামের রাস্তা দিয়ে বালির লরি যাতায়াত বন্ধ করেদেন ।পাশাপাশি তাঁরা বালি ঘাট থেকেও কোন বালি বোঝাই লরিকে রাস্তায় উঠতে না দিয়ে বালি খাদান বন্ধের দাবিতে সরব হন।
ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলও এলাকাবাসীর রোষ আঁচ করে তাঁরা শুধুমাত্র নীরব দর্শকের মতোই মুইদিপুর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। মুইদিপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজু বাউরি ও খোকন বাউরি বলেন , তাঁদের গ্রামে বাঁধের রাস্তার দু'ধারে বহু পরিবার বসবাস করে ।
গ্রামের এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে দুটি বালি খাদান।গত বছর ৫ নভেম্বর গভীর রাতে ওই খাদান থেকে অতিরিক্ত বালি বোঝাই করে নিয়ে একটি লরি তাঁদের গ্রামের বাঁধের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল ।যাওয়ার সময়ে ওই লরিটি বাঁধের রাস্তার ধারের এক মাটির বাড়িতে উল্টে পড়ে।
এই স্থানেই ঘটেছিলো গত বছরের ভয়াবহ দুর্ঘটনা |
ওইদিন বালির নিচে চাপা পড়ে ঘরের ভিতরেই মারাযান ওই বাড়ির বধূ সন্ধ্যা বাউরি (৩২)এবং তাঁর নাবালক ছেলে মেয়ে রাহুল বাউরি (১২) ও রিঙ্কু বাউরি (১৫)।বাড়িতে না থাকায় ওই দিন প্রাণে বেঁচে যান সন্ধ্যার স্বামী প্রশান্ত বাউরি ।
সেই ঘটনার পর এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠলে পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল মুইদিপুর গ্রামের বাঁধের রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে ওভারলোড বালির লরি যাতায়াত করতে দেওয়া হবে না।কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা কথা রাখেন নি ।
এই বছর একই জায়গায় বালি খাদান চালু হওয়ার পর থেকে দিনে ও রাতে শয়ে শয়ে ওভারলোড বালি বোঝাই লরি যাতায়াত করছে । পথে থাকা পুলিশ সব দেখেও কোন অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। রাজু বাউরি জানান , শুক্রবার গভীর রাতে মূল রাস্তা থেকে নেমে যাওয়া ওভারলোড বালি বোঝাই একটি লরি তাঁদের বাড়িতে উল্টে পড়ার উপক্রম হয় ।
কোন কারণে লরিটি উল্টে না যাওয়া তাঁরা দুই পরিবারের সদস্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ।এই ঘটনার জন্য গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাঁধের রাস্তা দিয়ে বালির লরি যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে ।
গ্রামের এক বধূ শ্যামলী বাউরি বলেন, বালি কারবারীরা বালির ব্যবসা করে মুনাফা লুটার জন্য গরিব মানুষের জীবন শেষ করে দিতে চাইছে । অথচ প্রশাসন ও নির্বিকার হয়ে রয়েছে ।
প্রতিবাদে সামিল স্থানীয় বাসিন্দা হিরু শেখ, সুভাষ মালিকরা বলেন ,তাঁদের এলাকায় থাকা দুটি বালি খাদানের মালিকই কোন নিয়মকানুন মানছেন না ।খাদান গুলি থেকে ওভারলোড বালি লোড করে লরি গুলি রস্তায় উঠছে।খাদানে চালকদের মদ খাওয়াতেও কোন নিষেধ নেই বলে অভিযোগ করেন।
ওই ওভারলোড বালির লরি খাদান থেকে উঠে মুইদিপুর ,রেশেলাতপুর গ্রামের বাঁধের রাস্তা দিয়ে গিয়ে হুগলীর চাঁপাডাঙ্গর দিকে চলে যায়। এই পথে তিন চারটি স্কুল রয়েছে । ওভারলোড বালি বোঝাই লরি গুলি যে ভাবে দ্রুত গতিতে বাঁধের রাস্তা দিয়ে যায় তার জেরে যেকোন সময়ে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারাতে পারে বলে জানান তিনি ।
অন্যদিকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা রফিকুল ইসলাম জানান তিনি ঘটনার কথা শুনেছেন গ্রামবাসী ও ঘাট মালিকদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি জানান ঘাট মালিকদের রাস্তা মেরামত করার জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরো জানান কিছু গাড়ি ওভারলোড যাচ্ছে সে খবর তারকাছেও এসেছে তিনি প্রশাসনকে অনুরোধ করেন ওভারলোডের বিষয়টি দেখার জন্য।
গ্রামবাসীদের দাবি তাদের প্রাণ হাতে নিয়ে থাকতে হয়, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক এই অসাধু ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এবং অবিলম্বে ওভারলোড বালির গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করুক এবং রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করুক।