সংবাদদাতা,পূর্ব বর্ধমান:- আবাস যোজনা তালিকায় নাম মাত্র ১১ জন উপভোক্তার।পূর্ব বর্ধমানের গলসি ২ নম্বর ব্লকের পর এবার আউশগ্রাম ১ নম্বর ব্লক আবাস প্লাসের গেরোয়।এ যেন বাংলার এক নেই গ্রাম ,কিছুই না পাওয়া একটা গ্রাম।এখানে কোন কলকারখানাও নেই, একশো দিনের কাজও নেই।এই গ্রামে আছে বলতে শুধু সারিসারি মাটির বাড়ি, বন জঙ্গল ,গাছের ডাল আর গাছের পাতা।
প্রাকৃতিক এই সম্পদ টুকুই পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের সখাডাঙ্গা ও মাঝেরডাঙ্গা গ্রামের তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের অন্ন সংস্থানের একমাত্র ভরসা।কেন্দ্র বা রাজ্য,কোন সরকারের প্রতিনিধিরাই নাকি কিছু না পাওয়া এইসব গ্রামের বাসিন্দাদের কোন খোঁজও নেন না।নিদারুন কষ্টে দিন যাপন করা এখানকার গ্রামগুলির মানুষজন তাই সরকারী আবাস যোজনার পাকা বাড়ি পাবার আশাও করেন না।তাঁদের সুদিন ফেরাতে কবে সরকার বা প্রশাসন উদ্যোগী হবে,তাও এখানকার বাসিন্দাদের কাছে অজানাই আছে।
জঙ্গল মহল হিসাবেই পরিচিত আউশগ্রাম। এখানকার সখাডাঙ্গা ও মাঝেরডাঙ্গা ছাড়াও বাবুইশোল, ভাতকুণ্ডা,প্রেমগঞ্জ, প্রতাপপুর,জরকাডাঙা,কুচিডাঙা,অমরপুর,আদুরিয়া, জালিকাঁদর,জামতারা দেবশালা এবং ভাল্কি সহ প্রায় ৩০ টি গ্রাম জঙ্গলমহল এলাকার মধ্যে রয়েছে ।গ্রামগুলিতে মূলত তফশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজন বসবাস করেন।মাটির বাড়িতে বসবাস করা গুলির সিংহভাগ পরিবারেরই মূল পেশা খেতমজুরি।
তবে সেই কাজ সারা বছরে মধ্যে মাত্র কয়েক মাস তাঁদের মেলে।বাকি দিন গুলিতে এইসব গ্রামের মানুষজনের রোজগারের ভরসা বলতে ছিল একশো দিনের কাজ,জঙ্গলের গাছের ডাল ও পাতা। আমন ধান গাছ কাটা ও ঝাড়ার কাজে এখন চাষিরা যন্ত্রের ব্যবহারই বেশী করছেন। তাই এখন খেত মজুরির কাজও তাঁদের তেমন খুব একটা মিলছে না।এদিকে ১০০ দিনের কাজও দীর্ঘ দিন বন্ধ।এই অবস্থায় সংসার চালাতে জঙ্গলে থাকা গাছের ডালপালা এবং শাল গাছ ও খেজুর গাছের পাতাই তাঁদের প্রধান অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দরিদ্র পরিবারের কর্তারা তাই তাঁদের বাড়ির বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো ও পড়াশুনা করানোটা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয় বলেই মনে করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সনকা বাউরি ,সুমি সোরেনরা বলেন,সারাদিন ধরে জঙ্গলে শাল পাতা ও খেজুর পাতা সংগ্রহ করে তা বাড়িতে আনতে মোটরভ্যানে ১০০ টাকা ভাড়া লাগে । ঝাঁটা তৈরির জন্য খেঁজুর পাতা চাঁছা ছোলা করতে অনেক সময় লাগে। পরিবারের পুরুষ,মহিলা এমনকি শিশু কিশোররাও এই কাজ করে। তারপর ঝাঁটা তৈরি করা হয় । এই কাজে প্রচুর পরিশ্রম । খরচও আছে । আমরা নিজেরা কায়িক পরিশ্রম করি বলে পুষিয়ে যায় ।'১২ টি ঝাঁটার একটি বান্ডিল বিক্রি হয় ৩০০ টাকায় ।একই ভাবে শাল পাতার থালা বোনার পর টানা দু'তিন দিন ধরে ওই থালা রোদে শুকাতে হয় । এক হাজার পিস সেই থালা বাজারে বিক্রী করে মাত্র ১৫০ টাকা দাম পাই ।
তাতে কি সংসার চলে ? কিন্তু কি আর করার আছে ! এই ভাবেই চালাতে হচ্ছে ।পরিবারের কারুর কঠিন রোগব্যাধি হলে তখন দুশ্চিন্তার পাহাড় যেন মাথায় ভেঙে পড়ে। আক্ষেপ প্রকাশ করে সুমিদেবী বলেন,'আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তা পাইনি ।আমাদের গ্রামের কেউ মাটির ঘরে, আবার কেউ এক কুঠুরি কুঁড়ে ঘরে বসবাস করে ।সরকারি ঘর পাওয়ার সৌভাগ্য আমাদের হয় নি। আর আদৌ কোনদিন হবে কিনা তাও জানা নেই!
এইসব গ্রাম গুলির মানুষদের দুরাবস্থার কারণ বিষয়ে বিডিও (আউশগ্রাম ১ ব্লক) অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি টেলিফোনে বলেন,“কেন্দ্রের তরফে (সেন্ট্রাল পোর্টালে) এখনও আউশগ্রাম বাসীর বাড়ি পাবার ছাড়পত্র দেয় নি । দিলে তবে তো বাড়ি পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্ন আসবে।বিডিও এও জানান ,আবাস যোজনার সরকারী বাড়ির জন্য আমাদের ব্লকে সাড়ে চার হাজর জন বাসিন্দার নাম আপলোড করা আছে।
কিন্তু গোটা ব্লকের জন্য ছাড়পত্র মিলেছে মাত্র ১১ টি বাড়ির । তবে ব্লক থেকে আড়াই হাজার জনকে বিধবা ভাতা ও ৬ হাজার জনকে ,বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার জন্য কাজ হচ্ছে। এইসব ভাতা পাবার জন্য আরো কেউ যদি আবেদন করেন তাঁদের জন্যও ব্যবস্থা করা হবে বলে বিডিও জানিয়েছেন“।
আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,“সরকারী আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে আউশগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা তৈরি না হলেও আউশগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের ক্ষেত্রে হয়েছে। বিষয়টি তিনি রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন। রাজ্য সরকার এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিচ্ছে“।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহসভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ব্লক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের পোটালে আবাস যোজনার জন্য তালিকা তোলা হয়।কিন্তু টেকনিক্যাল কারণে তা মুছে গেছে। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বারে বারে চিঠি পাঠানো হলেও কোন কাজ হয় নি।এই নিয়ে তিনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন।
এই বিষয়ে জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, এর জন্য দায়ী তৃণমূল সরকার।নিজের নাম তুলতে গিয়ে গণ্ডগোল হয়েছে। আর এখন কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।