Type Here to Get Search Results !

গলসিতে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১



সংবাদাতা,পূর্ব বর্ধমান:- স্ত্রীকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় স্বামীকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে কুড়ুল  দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হল বন্ধু ।ধৃতের নাম মনোজ ঘোষ। তাঁর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার রামগোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সন্তোষপুর গ্রামে। প্রতিবেশী উৎপল ঘোষ(৩৩)কে নৃশংস ভাবে খুনের অভিযোগে গলসি থানার পুলিশ সোমবার দুপুরে মনোজকে গ্রেপ্তার করে।পুলিশের দাবি ধৃত মনোজ জেরায় উৎপল ঘোষকে খুনের কথা কবুলও করেছে ।এই খুনের ঘটনায় আর কেউ  মনোজের সহযোগী ছিল কিনা তাও  পুলিশ খতিয়ে দেখছে।মৃতের পরিবার পুলিশের কাছে অভিযুক্ত মনোজের দৃষ্টান্তমূলক সাজার  দাবি জানিয়েছেন। 


গলসির সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দা  উৎপল ঘোষ পেশায় ছিলেন মৎসজীবী।গ্রামের পুকুরে তিনি মাছ চাষ করতেন।তাঁদেরই প্রতিবেশী হলেন  মনোজ ঘোষ।মৃতের আত্মীয় শম্ভুনাথ পাণ্ডে জানিয়েছেন , রবিবার সন্ধ্যায় বাড়িতেই নিজের ৬ বছর বয়সী ছেলেকে পড়াচ্ছিলেন। ওই সময়ে পরিচিত কেউ উৎপলকে ফোন করে ডাকে ।সেই ফোন আসার পর  উৎপল তাঁর ছোট ছেলেকে বাড়িতে স্ত্রী কাছে রেখে বাইরে বের হয় । এরপর রাত আনুমানিক ৯ টা নাগাদ এলাকার লোকজন দেখেন গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে রক্তাত অবস্থায় পড়ে রয়েছে উৎপল ।আর একটা কুড়ুলের ধারালো অংশ তাঁর মাথায় গেঁথে রয়েছে । এই ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে ।স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে গলসি থানার পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌছায়। কুড়ুলটি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি পুলিশ উৎপলকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়  পুরসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে । সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃতবলে ঘোষণা করেন । 

 

এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে এলাকারই যুবক মনোজ ঘোষের সঙ্গে পুরানোশত্রুতা ছিল উৎপলের। কি কারণে শত্রুতা তৈরি হয়েছিল তা জানার জন্য পুলিশ মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে।পুলিশ কথা বলে জানতে পারে ,উৎপলের স্ত্রীকে প্রায়সই উত্যক্ত করতো মনোজ। সেটা মেনে নিতে না পেরে উৎপল প্রতিবাদ করে । আর তার কারণেই উৎপলের সঙ্গে বিরোধ বাঁধে মনোজের ।এমনটা জানার পরেই পুলিশ মনোজের খোঁজ চালানো শুরু করে ।রাতেই এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ মনোজকে ধরে থানায় নিয়ে যায় ।এদিন সকালে পুলিশ  উৎপলের মৃতদেহ  ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান  মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে পাঠিয়ে মনোজ কে মারাথন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।জেরায় মনোজ স্বীকার করে নেয় ,“ফোন করে উৎপলকে পুকুর পাড়ে ডেকে নিয়ে  সে  কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে  তাকে  খুন করেছে“।  জেরায় এই কথা কবুল করার পরেই গলসি থানার পুলিশ এদিন বিকালে মনোজ ঘোঘকে গ্রেপ্তার করে ।



 উৎপলকে খুনের ঘটনার মনোজকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এই খবর সন্তোষপুর  গ্রামে পৌছাতেই  গ্রামে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয় ।তারই মধ্যে ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে উৎপল ঘোষের মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে ফিরল এলাকাবাসীর ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে । উত্তেজিত এলাকার লোকজন এর পরেই  চড়াও হয় মনোজ  ও তাঁর জ্যাঠা এবং  কাকার বাড়িতে । তারা মনোজের  বাড়িতে থাকা একটি বাইক ও মনোজের জ্যাঠার বাড়িতে থাকা একটি চারচাকা গাড়ি ও বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় । এমন কি মনোজের কাকার বাড়িতে তাকা একটি ট্র্যাক্টর ও খড়ের পালুই তেও উত্তেজিত এলাকাবাসী আগুন ধরিয়ে দেয় । দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌছে বেশ কিছু সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে । উত্তেজনা থাকায় এলাকায় বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট । 



 মৃতের আত্মীয় শম্ভুনাথ পাণ্ডে জানান, উৎপলের স্ত্রী কে নানা ভাবে  উত্যক্ত করতো মনোজ । স্ত্রীর কাছ থেকে সেই কথা জানার পর উৎপল তার প্রতিবাদ ছানিয়ে মনোজকে শোধরানোর কথা বলে। কিন্তু শোধরানো দূরের কথা, উল্টে মনোজ উত্যক্ত করেই যেত উৎপলের স্ত্রীকে । এই ঘটনা মনেনিতে না পরে উৎপল কিছুদিন আগে গলসি থানায় গিয়ে মনোজের বিরুদ্ধে অভিযোগও জানিয়ে ছিল । 


পুলিশ মনোজকে ধমক দিয়ে শোধরানোর কথা বলে তখনকার মতো মনোজকে ছেড়ে দেয় । তবে থানায় অভিযোগ জানানোর চটে গিয়ে মনোজের বাড়ির লোকজন উৎপলের বাড়িতে চড়াও হয়ে উৎপলকে প্রাণে মেরে দেবার হুমকি দিয়ে যায় ।শম্ভুনাথ পাণ্ডে বলেন'সেই থেকে দুই পরিবারের মধ্যে তৈরি হয় বিবাদ।তবে হুমকি মতোই মনোজ যে এত  পরিকল্পনা করে  নৃশংস ভাবে উৎপলকে প্রাণে  মরেদেবে তা আমরা ও পাড়া প্রতিবেশীর কেউ কল্পনাও করতে পারেন নি' ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad