নিজস্ব প্রতিনিধি:- এবছর কোভিড বিধিতে আটকে সর্পদেবী ঝাঁকলাই এর পুজো।তবুও সরকারি নির্দেশিকা মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই রবিবার পূর্ব বর্ধমানের ভাতার ও মঙ্গলকোটে সর্পদেবী ঝাঁকলাইয়ের পুজো হল।প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে ভাতারের বড়পোশলা, শিকোত্তর, মুকুন্দপুর এবং মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা, পলসোনা, মুশারু এবং নিগন মিলে সাতটি গ্রামে ঝাঁকলাই পুজো হয়।
তবে বর্তমানে শুধুমাত্র বড়পোশলা, ছোটপোশলা, মুশারু এবং পলসোনা এই চার গ্রামেই শুধু দেখা যায় ঝাঁকলাই নামে এই সাপের। গ্রামবাসীরা এখানে জ্যান্ত সাপকে দেবীজ্ঞানে পুজো করেন। এলাকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ঝাঁকলাই কাউকে কামড়ায় না। আর কোনও কারণে ছোবল দিলে দেবীর মন্দিরের মাটি লেপে দিলেই বিষমুক্ত হয়ে যায় রোগী। এই বিশ্বাস নিয়েই ঝাঁকলাই নিয়ে ঘর করেন চার গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামবাসীরা বলেন, রান্নাঘর থেকে শোবার ঘর সর্বত্র অবাধ বিচরণ এই বিষধর কেউটে প্রজাতির সাপের।
এই ঝাঁকলাই সাপ নিয়ে অনেক গল্পগাথা আছে।এলাকার বাসিন্দাদের ধারণা ঝাঁকলাই আসলে কালনাগিনী। লক্ষ্মীন্দরকে লোহার বাসরঘরে দংশন করার পর পালানোর সময় বেহুলা কাজললতা ছুড়ে মারে।কাজললতার আঘাতে কালনাগিনীর লেজ কেটে যায়। এখানে ঝাঁকলাইয়ের লেজ কাটা।
এলাকার বাসিন্দা তাপস কুমার চ্যাটার্জী বলেন,পলসোনা গ্রামে একটা ডাঙা আছে।সেই ডাঙার নাম খুনগোর।কালিয়াদহের কালনাগিনী বেহুলার শাপে মর্তে আসে। খুনগোর ডাঙায় বসবার করতে শুরু করে। গ্রামের বাসিন্দা মুরারী মোহন চক্রবর্তীকে কালনাগিনী স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলে আমাকে নিয়ে গিয়ে পুজো কর।সেই থেকেই ঝাঁকলাইয়ের পুজো হয়ে আসছে। তিনি বলেন
এখানে যেসব গ্রামে ঝাঁকলাই সাপ দেখা যায় সেসব এলাকায় সচরাচর অন্য কোনও বিষধর সাপ দেখা যায় না। ঝাঁকলাই রাতে বের হয় না। এলাকা ছেড়ে বেরোয় না এই সাপ। গায়ের রং কালচে বাদামি।এলাকায় গেলেই অলিগলিতে এই কেউটে সাপের দেখা মেলে।
কিন্তু কী বলছেন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষজন ? পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের বর্ধমান জেলা কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বলছেন, এটা মানুষ এবং প্রাণীর সহাবস্থানের ফল।তাছাড়া বিষয়টি প্রাকৃতিকভাবেও ঘটেছে। সাপ এমনিতেই ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণী।কোনো কারণ ছাড়া সে কামড়ায় না। তাছাড়া ধর্মীয় রীতিনীতির কারণে এখানকার মানুষেরা সাপকে বিরক্ত করেন না। তবে এই সাপের বিষ আছে।কামড়ালে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে বলে জানা গেছে।তাঁর মতে দীর্ঘদিনের সহাবস্থানের ফলে এখানে সাপেড় কামড়ের ঘটনা খুবই কম।