Type Here to Get Search Results !

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ...লড়ছে রবিউল

নিজের পায়ে টানা রিক্সাকে ভেঙ্গে ভ্যানে পরিণত করেছে। সেই ভ্যানে চলছে করোনা রোগী পরিবহণ। করোনায় হারিয়েছেন মাকে। চোখের সামনে দেখেছেন গাড়ি ভাড়া নিয়ে কালোবাজারি। তাই ধিক্কারে বিনামূল্যে ভ্যানে করেই করোনা রোগী পরিবহণ করছেন বছর সত্তরের রবিউল। 

বর্ধমান শহরের বাবুরবাগের বাসিন্দা সেখ রবিউল হক। পেশায় রিক্সাচালক। মাসখানেক আগে বাড়ির পাশে এক  বৃদ্ধা মহিলা করোনা আক্রান্ত হন। তাঁকে ফেলেই বাড়ির সদস্যরা পালিয়ে যায়। বাড়িতেই মারা যান ওই মহিলা। 

তারপর রোজার সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান নিজের মা। সেই সময় টোটো করে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভাড়া  চাওয়া হয় তিন হাজার টাকা। অনেক কষ্টে মাকে হাসপাতালে নিয়েও গেলেও বাড়ি ফেরেননি তিনি। তারপর থেকেই ধিক্কারে নিজেই করোনা রোগী পরিবহণের সিধান্ত নিয়ে ফেলেন রবিউল।

সাধ থাকলেও ছিল না সাধ্য। কারণ, থাকার মধ্যে রয়েছে একটা রিক্সা। তাই তিন হাজার টাকা খরচা করে রিক্সাকে ভ্যানে পরিণত করেন। সেই ভ্যানের গায়ে পোষ্টার দিয়ে শুরু করেন পরিষেবা। ‘ অসহায় করোনা ব্যক্তিদের জন্য হাসপাতাল পরিষেবা দেওয়া হবে’। সঙ্গে যোগাযোগ নাম্বার। বিনামূল্যে তিনি দিয়ে চলছেন এই পরিষেবা। বর্ধমান শহরের নার্স কোয়ার্টার মোড়ে সারাদিন ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। ডাক পড়লেই ছুটে চলেন রোগী পৌঁছতে। 

করোনা আবহে নিজের পেটের ভাতের জোগার সব দিন হয় না। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সাহায্য করেন, সেই দিয়েই চলছে তিনজনের সংসার।বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে রয়েছে। নিজের বার্ধক্য ভাতাও নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা, তবুও  রবিউল কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল। নার্স কোয়ার্টার মোড়ে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্স চালকরা এই সময় ব্যবসা করছেন। টোটোচালকরা আজেবাজে ভাড়া চাইছে। এই সময় কি ব্যবসার সময়। তাই আমি নিজেই এই কাজ করছি।  যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে এই কাজই করব। 

এখনও পর্যন্ত হটুদেওয়ান, পীরবাহারাম, দুবরাজদিঘী থেকে ৩ জন করোনা রোগীকে তিনি হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু সুরক্ষা? রবিউল জানায়, পরিচিতরা একটি পিপিই কিট,  কিছু মাস্ক ও স্যানিটাইজার দিয়েছেন। করোনা রোগী আনতে গেলে এইগুলো ব্যবহার করি। এইভাবেই চলে যাচ্ছে।

পেশায় রিক্সাচালক গণেশ চক্রবর্তী জানান, আমরা একসাথেই রিক্সা চালাতাম।  কিন্তু রবিউল তার মাকে করোনায় হারানোর পর এই জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে। তবে এই ধরনের প্রয়াস এই প্রথম নয়। এর আগেও এক হিন্দুর মৃতদেহ তার পরিবার মর্গ থেকে না নিয়ে যাওয়ার কথা ডোমেদের মুখ থেকে শুনে, নিয়ম নিষ্ঠা মেনে তার সৎকার করেছিলেন। এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সমাজসেবী সকলেই রবিউলের এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়েছে। 

এলাকার বিধায়ক খোকন দাস, সেখ রবিউলের ভুয়সী প্রশংসা করে জানান, যেখানে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের রিক্সা, এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যেতে চাইছে না সেখানে  নিজে একজন গরীব মানুষ হয়েও যেভাবে করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কোভিডের বাড়বাড়ন্ত একটু স্বাভাবিক হলে রবিউল বাবুকে ডেকে তার ব্যক্তিগত সমস্যার কথা শুনে তার সমাধান করার চেষ্টা করা হবে বলে জানালেন বিধায়ক খোকন দাস।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad