প্রতিনিধি,দুর্গাপুর:-দুর্গাপুরের বীরভানপুর মহাশ্মশানে কোভিড মৃতদেহ সৎকার করতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের ঘটনায় এবার নড়েচড়ে বসলো জেলা প্রশাসন। বুধবার দুর্গাপুর মহকুমা শাসকের দফতরে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের পদস্থ আধিকারিকদের সাথে জেলার এডিএম (সাধারণ )শুভেন্দু বসুর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়।
কিন্তু দালাল চক্রের ৱ্যাকেট ভাঙতে কেন এখনও কেউ গ্রেপ্তার হলো না তা নিয়ে প্রশ্ন তুললো বিরোধী বিজেপি ও সিপিআইএম নেতৃত্ব। দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের বীরভানপুর মহাশ্মশানে যান, দাবী তোলেন অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবী ও নিরপেক্ষ তদন্তের, সমালোচনা করেন দুর্গাপুর নগর নিগমের ভূমিকার, কারণ এই শ্মশান দুর্গাপুর নগর নিগমের নিয়ন্ত্রণে।
কোভিড আক্রান্ত মৃতদেহ সৎকার করতে গিয়ে বীরভানপুর মহাশ্মশানে রাতের বেলায় দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ছে মৃতের আত্মীয় পরিজনরা, বাধ্য হয়ে প্রিয়জনের মৃতদেহর সৎকার করতে কখনো পনেরো কখনো কুড়ি বা তারও বেশী অঙ্কের টাকা দাবী করছিলো এই দালাল চক্রের পান্ডারা।
বুধবার এই চাঞ্চল্যকর খবর সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন।কোভিড আক্রান্ত এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ানের মৃত্যুর পর তার সৎকার করতে গিয়ে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় ঐ অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ানের পরিবার।
বুধবার সুবিচার চাইতে দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তার পরিবার।শ্মশানে দালাল চক্রের তান্ডবের গোপন ভিডিও ফুটেজ প্রশাসনকে দেওয়ার পরও কিন্তু এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর নগর নিগমের বোর্ড রুমে মহকুমা প্রশাসন,নগর নিগমের কমিশনার,মেয়র পারিষদ, কাউন্সিলার বোরো চেয়ারম্যানদের সাথে নিয়ে এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রীসভার বিশেষ উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার, আলোচনা হয় দুর্গাপুরের বীরভানপুর মহাশ্মশানের এই দালাল চক্র নিয়ে, সেখান থেকেই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে বলে জানান দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রীসভার উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার।
কিন্তু শুধু কথার কথাতে কাজ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জেলা সিপিআইএম নেতৃত্ব। সংগঠনের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের অভিযোগ, আগে পুলিশ অভিযোগকারী মৃত অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ানের পরিবারের দায়ের করা লিখিত অভিযোগকে FIR হিসেবে দেখে ঐ গোপন ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করুক অভিযুক্তদের, এরপর আলাপ আলোচনা যত খুশী করুক।
বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর মহকুমা শাসকে অর্ঘপ্রসূন কাজীর কাছে সিপিআইএমের একটি প্রতিনিধি দল কোভিড আবহে বাড়তে থাকা কালোবাজারি ও বীরভানপুর মহাশ্মশানের এই দালাল চক্রের ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবীসম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দেয়।
এখন দেখার বিষয় দুর্গাপুরের বীরভানপুর মহাশ্মশানের এই দালাল চক্রের ৱ্যাকেট ভাঙতে প্রশাসন কতটা সদর্থক ভূমিকা নেয়। কারণ বিরোধীদের অভিযোগ প্রশাসনিক তৎপরতা না থাকলে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে এই দালাল চক্র আরো সক্রিয় হয়ে উঠবে, আর এতে ভোগান্তি আরো বাড়বে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যাক্তির পরিবারের সদস্যদের।
এখন সব প্রশ্নের উত্তর একমাত্র সময়ই দিতে পারে। মঙ্গলবার রাতে বীরভানপুর মহাশ্মশানের এই দালাল চক্রের গোপন ভিডিও ফুটেজ অভিযোগকারীর পরিবার মহকুমা প্রশাসনের হাতে বুধবার সকালে তুলে দেওয়ার পরও কেন অভিযুক্তরা এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার হলো না,তা নিয়ে উঠেছে বিস্তর প্রশ্ন।